কার্তিক ঝড়কে তুচ্ছ করে, আইপিএলের মঞ্চে রেকর্ড রানের বিনিময়ে জয় সানরাইজ হায়দ্রাবাদের

0

অঙ্কিতা দাস : বর্তমানে আইপিএলের মঞ্চে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু মানেই হারের পর্ব; এযাবত, আইপিএলের পাঁচটি ম্যাচেই হেরেছে বিরাট কোহলি ও ফাফ ডুপ্লেসির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এমনকি নিজেদের ঘরের পরিচিত চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেও আজকের ম্যাচটি হেরে বসলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু; অপরদিকে, পূর্ববর্তী কিছু আইপিএল ম্যাচ থেকেই সানরাইজ হায়দ্রাবাদ তাদের জয়গাঁথা লিখতে শুরু করে, যা আজও অক্ষুন্ন রয়ে যায় তাদের রেকর্ড রান সংখ্যা ২৮৭ রানের বিনিময়ে।
সোমবারের আইপিএল ম্যাচেও পুনরায় হার জুটলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ভাগ্যে; আজকের ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাটিতেই অর্থাৎ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের চেনা ২২ গজের যুদ্ধেও হারতে হলো বিরাট কোহলি ও ফাফ ডুপ্লেসির সাধের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে। সানরাইজ হায়দ্রাবাদের রেকর্ড রান সংখ্যা ২৮৭ রানের বিরুদ্ধে মোক্ষম জবাব দিতে গিয়ে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৬২ রানেই থমকে যায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ইনিংস; অবশেষে ২৫ রানের ব্যবধানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর থেকে জয়ের খেতাব ছিনিয়ে নেয় সানরাইজ হায়দ্রাবাদ। সোমবারের ম্যাচে দীনেশ কার্তিকের ৮৩ রানের দুর্ধর্ষ ঝড়ও জয়ের লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারল না ফাফ ডুপ্লেসির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে। আজকের ম্যাচ নিয়ে মোট ৭টি ম্যাচ খেলেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, যার মধ্যে ৬টি ম্যাচেই জুটেছে তাদের শুধুই হার; অপরদিকে মোট ৬টি ম্যাচ খেলেছে সানরাইজ হায়দ্রাবাদ, যার মধ্যে ৪টি ম্যাচেই দুর্ধর্ষ জয়লাভ করেছে তারা।
আজকের ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি; অন্যদিকে প্রথমে ব্যাটিং করার সুযোগকে অসাধারণভাবে কাজে লাগায় সানরাইজ হায়দ্রাবাদের দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যানরা। ট্র্যাভিস হেড ও হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাটিং বিধ্বংসী ঝড়ে মাত্র ৩ উইকেটের বিনিময়ে সানরাইজ হায়দ্রাবাদের রান সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৭ রান; আইপিএলের মঞ্চে এই রান সংখ্যাই হলো “সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস”। মাত্র ১৯ দিনের মাথায় নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভেঙে দিল সানরাইজ হায়দ্রাবাদ; গত ২৮ শে মার্চ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে সানরাইজ হায়দ্রাবাদের রান সংখ্যা ছিল ৩ উইকেটের বিনিময়ে ২৭৭ রান আর আজকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে প্যাট কামিন্সের সানরাইজ হায়দ্রাবাদের রেকর্ড ব্রেকিং রানসংখ্যা হল ৩ উইকেটের বিনিময়ে ২৮৭ রান।
বেঙ্গালুরুর ২২ গজের যুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাবেই খেলার ওপেনিং করেছিল সানরাইজ হায়দ্রাবাদের ২ দক্ষ ওপেনিং ব্যাটসম্যান অভিষেক শর্মা ও ট্র্যাভিস হেড; অভিষেক শর্মা ২টি ৪ ও ২টি ৬ এর সহযোগে ২২ বলে ৩৪ রান করে আউট হয়ে শিবিরে ফিরে যান। অপর প্রান্তে, তখনও অবিচল ভাবেই খেলে গিয়েছেন ট্র্যাভিস হেড; যার দরুন তাঁর একারই রানসংখ্যা দাঁড়ায় ৯টি ৪ ও ৮টি ৬ এর সাহায্যে ৪১ বলে ১০২ রান। গত একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান তাঁর শতরান পূরণ করেন মাত্র ৩৯ বলে। সানরাইজ হায়দ্রাবাদের অপর দক্ষ ব্যাটসম্যান হেনরিখ ক্লাসেনও আজকের ম্যাচের ব্যাটিংয়ে কার্পন্যতা দেখাননি বরং তিনিও তাঁর ঝড়ো ইনিংস খুব অসাধারণ ভাবেই খেলে গিয়েছেন; তাঁর ইনিংসটি ছোটো হলেও রান সংখ্যা বড়ই ছিল। আজকের ম্যাচে হেনরিখ ক্লাসেনের রান সংখ্যা হল ২টি ৪ ও ৭টি ৬ এর বিনিময়ে ৩১ বলে ৬৭ রান।
সোমবারের ম্যাচে সানরাইজ হায়দ্রাবাদের ৩ দক্ষ ওপেনার ব্যাটসম্যান ছাড়াও পরবর্তী ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের বেস্ট পারফরম্যান্সই দেখিয়েছেন; কেননা অভিষেক শর্মা, ট্র্যাভিস হেড ও হেনরিখ ক্লাসেনের পরবর্তীতে এডেন মার্করাম ও আব্দুল সামাদও দলের রান সংখ্যার গতি বাড়ানো বই কমিয়ে দেননি। আজকের ম্যাচে এডেন মার্করাম এবং আব্দুল সামাদের রান সংখ্যা ছিল যথাক্রমে, ২টি ৪ ও ২টি ৬ এর সাহায্যে ১৭ বলে ৩২ রান এবং ৪টি ৪ ও ৩টি ৬ এর সহযোগে ১০ বলে ৩৭ রান। সোমবারের ম্যাচে অন্যান্য দিনের তুলনায় আব্দুল সামাদই যথেষ্ট আগ্রাসী মনোভাবে খেলছিলেন এবং তিনি ৩৭ রানের বিনিময়ে অপরাজিতও থেকে যান। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর আজকের ম্যাচের সফলতম বোলার হলেন লকি ফার্গুশন ও রিসি টোপলে; তাদের দুজনের উইকেট নেওয়ার পরিসংখ্যান হলো যথাক্রমে, ৫২ রানের বিনিময় ২টি উইকেট ও ৬৮ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট।
সানরাইজ হায়দ্রাবাদের রান সংখ্যার মোক্ষম জবাব দিতে গিয়ে শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাবে খেললেও কিছু সময়ের ব্যবধানে অনবরত উইকেট পড়ে যাওয়ায় শেষমেষ জয়ের হাসি হাসতে পারলোনা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ম্যাচের ওপেনিং করতে মাঠে নামেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি; নিজের ইনিংস ওপেন করতেই তিনি ৬টি ৪ ও ২টি ৬ এর সহযোগে ২০ বলে ৪২ রান করেন। ২২ গজের যুদ্ধের অপর প্রান্তে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ফাফ
ডুপ্লেসি শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাবে খেললেও তিনি তাঁর ইনিংস সাজান ৭টি ৪ ও ৪টি ৬ এর বিনিময়ে ২২ বলে ৬৮ রান দিয়ে। সোমবার ম্যাচের শুরুর পর্বটা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ভালো খেললেও ফাফ ডুপ্লেসির পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা নিজেদের অসাধারণ ও দক্ষ ব্যাটিং দর্শকবৃন্দের সামনে তুলে ধরতে পারেন না। তাইতো অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসির পরবর্তীতে খেলতে নামা ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যার পরিসংখ্যান হলো যথাক্রমে,
উইল জ্যাকস ৭ রানের ইনিংস,
রজত পটীদার ৯ রানের ইনিংস এবং
সৌরভ চৌহান ০ রানের ইনিংস। যার ফলে, ০ উইকেটের বিনিময়ে ৮০ রানের স্কোর বোর্ডের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু হয়ে যায় ৫ উইকেটের বিনিময়ে ১২২ রানের অধিকারী; যা পরবর্তীতে আর সামলে উঠতে পারেনা বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
ম্যাচের শেষের ইনিংসে অবশ্য মারমুখী লড়াই করলেন ২২ গজের যুদ্ধের অন্যতম খেলোয়াড় সৈনিক রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দীনেশ কার্তিক; কিন্তু তাঁর অপর প্রান্তের জুড়িদার তাঁর সাথে সঠিকভাবে সঙ্গ দিতে না পারায় শেষমেষ নিজের দলকে জয়ের মুকুট পড়াতে পারেননি ফাফ ডুপ্লেসির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দীনেশ কার্তিক আজকের ম্যাচে একাই লড়লেন আর করলেন ২৩ বলে অর্ধশতরান এবং পরবর্তীতে তিনি গড়ে তুললেন এক অবিশ্বাস্য ইনিংস ৫টি ৪ ও ৭টি ৬ এর বিনিময়ে ৩৫ বলে ৮৩ রানের সাহায্যে। দীনেশ কার্তিকের তৈরি করা এই রান সংখ্যা অল্প বিস্তর চাপে ফেলেছিল সানরাইজ হায়দ্রাবাদকে, কিন্তু তাও কিছু সময়ের ব্যবধানে গায়েব হয়ে যায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অবশিষ্ট ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স দেখে। কারণ, দীনেশ কার্তিকের পরবর্তীতে মহিপাল লোমেরার রান সংখ্যা হল ২টি ৬ এর বিনিময়ে ১১ বলে মাত্র ১৯ রান; আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন অনুজ রাওয়াতও। তাঁর রান সংখ্যা হল ৫টি ৪ এর সাহায্যে ১৪ বলে ২৫ রান এবং বিজয়কুমার বৈশাখের অপরাজিত রান সংখ্যা হল ১ রান। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সকলের অক্লান্ত ও আপ্রাণ চেষ্টা শেষমেষ কোনো কাজেই লাগলো না তাদের।
আজও সানরাইজ হায়দ্রাবাদের সফলতম ৩ বোলার হলেন যথাক্রমে, অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, মায়াঙ্ক মারকান্ডে এবং টি. নটরাজন আর তাদের উইকেট নেওয়ার পরিসংখ্যান হলো যথাক্রমে,
অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৪৩ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট,
মায়াঙ্ক মারকান্ডে ৪৬ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট এবং
টি. নটরাজন ৪৭ রানের বিনিময়ে ১ উইকেট।
সোমবারের ম্যাচে সানরাইজ হায়দ্রাবাদ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিল যে, তাদের জয়যাত্রা কেবল আইপিএলের ফাইনাল মঞ্চে উঠেই নয় বরং ফাইনাল জিতেই থামবে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *