নববর্ষ স্পেশাল ধামাকা হিসেবে ইডেনে লাখনউ সুপার জায়ান্টসকে হারিয়ে এক নতুন ইতিহাস গড়লো শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স

অঙ্কিতা দাস : নতুন বছরের শুরুটা কলকাতা নাইট রাইডার্স জয়ের হাত ধরেই করল। আজকে নতুন বছরের সূচনায় ইডেনে খেলতে এসে অবশেষে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে খুব বাজে ভাবে হেরেই বিদায় নিতে হলো লাখনউ সুপার জায়ান্টসকে। তারা প্রথমে ব্যাটিং করে ১৬১ রানের রান সংখ্যা দাঁড় করালেও শেষমেষ শাহরুখের দুর্ধর্ষ টিম কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হার স্বীকার করতেই হলো লাখনউ সুপার জায়ান্টসকে।
নববর্ষের উপহার উপলক্ষ্যে আজ এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী রইল কলকাতার ইডেন গার্ডেন; কারণ আজ প্রথম কলকাতা নাইট রাইডার্স ৮ উইকেটের বিনিময়ে নিজেদের ঘরের মাটিতেই মিষ্টিমুখের বদলে ২২ গজের যুদ্ধে হারের কষ্ট উপহার দিল লাখনউ সুপার জায়ান্টসকে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বেস্ট বোলার সুনীল নারাইনের বোলিং দক্ষতা যেমন একদিকে আটকে রাখলো লাখনউ সুপার জায়ান্টসের রান সংখ্যা বাড়াতে আবার অপরদিকে ঠিক তেমনই কলকাতা নাইট রাইডার্সের দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান ফিল সল্ট অনায়াসে জয়ের রান সংখ্যা গড়ে তুলল তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং ঝড়ে।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনের পিচ বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক; তাইতো, টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। পরবর্তীতে লাখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তিনিও যদি টসে জিততেন তাহলে বোলিং করারই সিদ্ধান্ত নিতেন আর সেই সিদ্ধান্তটা যে কতটা যথাপোযুক্ত তা বোঝা গেল লাখনউ সুপার জায়ান্টসের পাওয়ার-প্লে দেখেই। পাওয়ার-প্লেতে মাত্র ৪৯ রানই করতে পারল লাখনউ সুপার জায়ান্টসের দক্ষ ব্যাটসম্যানরা; কারণ কলকাতা নাইট রাইডার্সের দক্ষ বোলাররা লাখনউ সুপার জায়ান্টসের ব্যাটসম্যানদেরকে রান সংখ্যা তৈরি করার সুযোগটিই দেয়নি আর এই কাজ সব থেকে নিপুণভাবে এবং দায়িত্ব সহকারে পালন করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বেস্ট বোলার সুনীল নারাইন। তিনি তাঁর ৪ ওভারের ইনিংসে মাত্র ১৭ রানই দিয়েছিলেন লাখনউ সুপার জায়ান্টসকে আর সেই সাথে এও বুঝিয়েছিলেন যে, যদি দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেকে বেস্ট প্রমাণিত করা যায়। তাইতো প্রচলিত ধারণা “ইডেনের পিচ শুধুমাত্র পেসার বোলার সহায়ক” এই ধারণাকেই আজ তিনি অনায়াসে পাল্টে দিয়েছিলেন।
পাওয়ার-প্লের পরে লাখনউ সুপার জায়ান্টসের রান রেট ও রানের গতি দুটোই আরও কমে যায়; যার দরুন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও দক্ষ ব্যাটসম্যান আয়ুষ বাদোনির জুটিও থমকে যায় ২৭ বলে যথাক্রমে ২টি ৬ এর সহযোগে ৩৯ ও ১টি ৬ এর বিনিময়ে ২৯ রানে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলারের বোলিং ঝড়ে লাখনউ সুপার জায়ান্টসের দক্ষ জুটি অর্থাৎ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও আয়ুষ বাদোনির মন্থর ইনিংসই দলের বড় রান তোলার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। নয়তো যেখানে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে লাখনউ সুপার জায়ান্টসের রান সংখ্যা ছিল ৪৯ রান; সেখানেই পাওয়ার-প্লের পরবর্তীর ৯ ওভারে সেই রান সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৬৪ রানে। এই মন্থর ইনিংস দেখেই দর্শকবৃন্দ ও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে হয়েছিল যে, লাখনউ সুপার জায়ান্টসের ২২ গজের যুদ্ধের গতি মাত্র ১৪০ রানেই থমকে যাবে; তবে আশ্চর্যজনকভাবে ইডেনের সূর্য ঢলে যাওয়ার সাথে সাথেই লাখনউ সুপার জায়ান্টসের খেলার গতিও নিজের চিরাচরিত মোড় বদলাতে থাকে। তাইতো, সূর্য ঢলার সাথে সাথেই নিকোলাস পুরাণ অতি সহজেই ৪টি ৬ এর সাহায্যে ৩২ বলে ৪৫ রানই শুধু করেননি, একই সাথে তিনি লাখনউ সুপার জায়ান্টসকে ১৬০ রানের গণ্ডিও পেরোতে সাহায্য করেছেন আর তাঁর দৌলতেই শেষ ৫ ওভারে দলের রান সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ রান।
রাতের ইডেনে রান সংখ্যা গড়ে তোলা যে অতি সহজ তা বুঝিয়ে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের দক্ষ টিম; ম্যাচের শুরুর ৪ ওভারেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের ফিল সল্ট অতি সহজেই ৪৪ রান উপহার দেয় নিজের দলকে। আজকের ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের রানের গতি কোনোভাবেই কমানো যায়নি; এমনকি ওপেনার ব্যাটসম্যান সুনীল নারাইন ও তিন নম্বরে খেলতে নামা খেলোয়াড় অঙ্গকৃশ রঘুবংশীর উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও এক অংশও রানের গতি কমেনি কলকাতা রাইট রাইডার্সের। লাখনউ সুপার জায়ান্টসের দলে একাধিক পেসার থাকলেও দক্ষ পেসার মায়াঙ্ক যাদব চোট পেলেও ম্যাচকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা হয়নি; কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের টিম সুদক্ষ হওয়ায় লাখনউ সুপার জায়ান্টসের বাকি পেসার যথাক্রমে শামার যোশেফ, যশ ঠাকুর, আর্শাদ খান ও মোহসিন খান থাকা সত্ত্বেও জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছানোতে বাঁধা হয়ে উঠতে পারেনি তারা।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের ইনিংসে কিছুটা কৃতিত্ব লাখনউ সুপার জায়ান্টসের নবাগত পেসার শামার জোসেফেরও; কেননা আইপিএলে তাঁর অভিষেকটা খুব একটা ভালো হয়নি বরং তাঁরই দৌলতে প্রথম ওভারেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের ঝুলিতে চলে আসে ২২ রান। ক্যারিবিয়ান পেসার এই শামার জোসেফ একের পর এক ওয়াইড এবং নো বলের মাধ্যমে তাঁর ৪ ওভারের ইনিংসে মোট ৪৭ রান দেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের দলকে; যার দরুন কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের দৌড় আরও সহজ হয়ে যায়। ছোট শর্ট বাঁচানোর তাগিদে বড় শর্টকে হেলায় হারালে এভাবেই যে ম্যাচ হারতে হয়, তা আজ বুঝিয়ে দিল হেরে যাওয়া লাখনউ সুপার জায়ান্টসের দল।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের সুদক্ষ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সুনীল নারাইন ও অঙ্গকৃশ রঘুবংশী রবিবারের ম্যাচে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স বা বড় শর্ট নিতে পারলেন না; তাদের গতি থমকে গেল যথাক্রমে ৬ ও ৭ রানের বিনিময়ে। তবুও কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের দৌড় থমকে যায়নি বরং ফিল সল্টের হাত ধরেই শেষমেষ জয়ের পতাকা ওড়ালো কলকাতা নাইট রাইডার্স; কারন আজকের ২২ গজের যুদ্ধে কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলোয়াড় ফিল সল্ট একাই ৪ রানের সহযোগে ৮৯ রান করে জয় হাসিল করিয়েই ছাড়েন নিজের দলকে। ফিল সল্টের সঙ্গী হিসেবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারও খুব একটা মন্দ খেলেননি, তিনি ৩৮ বলে ৩৮ রান করেন; তবে তাঁর এই মন্তর গতিতে খেলা পরবর্তীতে দুশ্চিন্তার কারণ যাতে না হয়, সেই বিষয়টাই অত্যন্ত ভাবাচ্ছে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে।
ইতিহাস গড়ার নেশায় নববর্ষের সূচনা যদিও অত্যন্ত সুমধুর হল কলকাতা নাইট রাইডার্সের, তবুও প্রথমবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হেরে যন্ত্রণাটা অত্যাধিকই রয়ে গেল লাখনউ সুপার জায়ান্টসের।